শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
Ajker Dainik
#সিংহের ডেরায় বাঘের থাবা

জয় দিয়েই বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু বাংলাদেশের

আজকের দৈনিক | এম মাহীউজ্জামান শাওন

প্রকাশিত: জুন ৮, ২০২৪, ০৭:৩১ পিএম

জয় দিয়েই বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু বাংলাদেশের
তাওহীদ হৃদয় শ্রীলংকার বিপক্ষে ম্যাচ জয়ের অঘোষিত নায়ক। তিনি ২০ বলে ২০০ স্ট্রাইক রেটে ৪০ রান করেন।

জয় ধরা দিল অবশেষে! টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারসাম্যপূর্ণ বোলিং ও চ্যালেঞ্জিং ব্যাটিং এর ওপর ভর করে শ্রীলংকার বিপক্ষে দুই উইকেট হাতে রেখেই নিজেদের প্রথম জয় তুলে নিয়েছে টিম টাইগার্স। এদিন ছয় বল হাতে রেখেই লংকানদের দেয়া ১২৫ রানের টার্গেট পার করেন হৃদয়-মাহমুদউল্লাহরা। টপ অর্ডারে তানজিদ তামিম, সৌম্য সরকার, লিটন কুমার, মিডল অর্ডারে তাওহীদ হৃদয়, শান্তকে দিয়ে সাজানো হয়। সাথে সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং রিশাদ হোসেনের মতো কমপ্লিট প্যাকেজ তো ছিলই। এদিনের ম্যাচের নায়ক হিসেবে কেউ পক্ষ নিয়েছেন তাওহীদ হৃদয়ের, কেউ বা মুস্তাফিজ আবার কেউ বা বলছে সাইলেন্ট কিলার মাহমুদউল্লাহই বাংলাদেশের আশা ভরসার জায়গা।  

তবে ব্যাটিং ইনিংসে শুরুতেই দুই ওভারে সৌম্য সরকার, তানজিদ হাসান তামিমের দুই উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। অধিনায়ক শান্তও এদিন কোনোই আশা দেখাতে পারেননি। পাঁচ ওভারে তিন উইকেটের পতন ঘটে বাংলাদেশের। শান্ত করেন মাত্র ৭ রান। যেখানে প্রথম পাওয়ার প্লেতে (৬ ওভার) শ্রীলংকার রান ছিল ৫৩ রান। সেখানে বাংলাদেশ তিন উইকেট হারিয়ে রান তোলে মাত্র ৩৪। লিটন কুমার, তাওহীদ হৃদয়ের ৬৩ রানের জুটির ওপর ভর করেই কিছুটা জয়ের আশা ফিরে পেলেও হৃদয়ের বিদায়ের পর আবারও শঙ্কায় পড়ে টিম বাংলাদেশ। টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চতুর্থ উইকেট পার্টনারশিপে এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি। সাকিব আল হাসান ৮ ও রিশাদ হোসেন ১ রানেই ঘরে ফিরে যান। তানজিম সাকিবকে সাথে নিয়ে অবশেষে ফিনিশার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদই এনে দেন সেই কাঙ্খিত প্রথম জয়। এ ম্যাচে শ্রীলংকার হয়ে চার ওভারে মাত্র ১৮ রান দিয়ে সর্বোচ্চ চার উইকেট নেন নুয়ান থুসারা।

পেসার শরিফুল ইসলাম ইনজুরিতে পড়ার পর গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচের জন্য মুস্তাফিজ, তাসকিন, তানজিম সাকিবদের ওপর ভরসা রেখেই পেস অ্যাটাক সাজিয়েছিল টিম বাংলাদেশ। সেই ভরসার জায়গাটুকু অবশ্য তারা অপূরণ রাখেননি।  মুস্তাফিজ-রিশাদ তিনটি, তাসকিন আহমেদ দুইটি, তানজিম হাসান সাকিব একটি উইকেট নেন। তারা শুধু উইকেটই নেননি, এদিন দলের প্রয়োজনে তাদের প্রতিটি ডেলিভারি ছিল জেতার লক্ষ্য নিয়েই।

শনিবার বাংলাদেশ সময় ছয়টায় ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি গ্রাউন্ডে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টস জিতে ফিল্ডিং এর সিদ্ধান্ত নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তরুণ তানজিম সাকিবকে দিয়ে শুরু করে বাংলাদেশ। নিজেদের ব্যাটিং ইনিংসে লঙ্কানরা দারুণভাবে শুরু করলেও বাংলাদেশী বোলারদের বারংবার আগ্রাসী বোলিং এর মুখে একে একে তাদেরকে ক্রিজ ছাড়তে হয়েছে। 

দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুজন খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এদিন কোনো উইকেট নেননি কিংবা বাংলাদেশের বোলিং ইনিংস এ তেমন কোনো কাজ করেননি। ঐযে হয় মারো নয়তো মরো এমন মানসিকতা নিয়েই মাঠে নামার ফল পেয়েছে তরুণনির্ভর বাংলাদেশ। এদিন রিশাদ হোসেন যেমন বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রথম ম্যাচসেরা হয়েছে এর সাথে আরও একটি জিনিস খুব ভালোভাবেই মিশে গিয়েছে। আর তা হলো বিশ্বকাপের আসরে কোন স্পেসিয়ালিস্ট লেগস্পিনার এর এটাই প্রথম ম্যাচ। এ ম্যাচেই বাজিমাত করেছেন রিশাদ হোসেন। চার অভারে ২২ রান দিয়ে নিয়েছেন তিনটি বড় উইকেট। বাংলাদেশের অনেক অভিজ্ঞ ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, রিশাদ হোসেনকে বলা হয়েছিল "কমপ্লিট প্যাকেজ"। সেই কথাটাই যেনো রিশাদ আরও একবার সকলকে স্মরণ করিয়ে দেন। বলে রাখা ভালো এই বিশ্বকাপে ডালাসের ক্রিজে এদিন সবচেয়ে বেশি বল টার্ন করেন ২১ বছর বয়সী এই বোলার।

শ্রীলংকার কাছে এই ম্যাচে জেতাটা ছিল বিশাল সমীকরণের। জিতলে গ্রুপ পর্বে টিকে থাকাটা যেমন সহজ হারলে তেমনই কঠিন ছিল লঙ্কান টিমের জন্য। স্বাভাবিকভাবেই আজ হেরে পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে অবস্থান করছে ক্রিস সিল্ভারউড এর শিষ্যরা।    

শুরুতে প্রথম পাঁচ ওভারে তাসকিন আহমেদের বোলিং তোপে পড়ে টপ অর্ডারের অভিজ্ঞ ব্যাটসমান কুশল মেন্ডিসের উইকেট হারায় শ্রীলংকা। তাদের সংগ্রহ হয় ৪৮ রান। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানকে বোলিং এ আনেন অধিনায়ক শান্ত। টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম বলেই কামিন্দু মেন্ডিসের উইকেট তুলে নেন তিনি। তানজিম হাসান সাকিবের হাতে বল তুলে দিয়ে মাত্র ৪ রানেই ফিরে যান কুশল। প্রথম পাওয়ার প্লেতে লঙ্কানদের রান আসে ৫৩ রান। অষ্টম ওভারে ক্রিজে সেট হয়ে যাওয়া পাথুম নিশানকাকে ফাঁদে ফেলে আবারও ব্রেক থ্রু এনে দেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজ। ২৮ বলে ৪৭ রান করে অধিনায়ক শান্তকে ক্যাচ দিয়ে ১৬৭.৮৬ স্ট্রাইক রেট নিয়ে মাঠ ছাড়েন নিশানকা। প্রথম দশ ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে ৭৪ রান তুলতে পারে শ্রীলঙ্কা। শ্রীলংকার ১০০ রান আসে ১৪ ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে। এরপর নিজের তৃতীয় ওভারে রিশাদ হোসেন পরপর দুটি বলে তুলে নেন দুটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। চারিথ আসালাঙ্কা ১৯ রান ও লঙ্কান অধিনায়ক ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্কাকে শূন্য রানেই ঘরে ফেরান রিশাদ হোসেন। ১৬ ওভারে ৫ উইকেটে ১০৯ রান তোলে লঙ্কান ব্যাটসমানরা। নিজের শেষ ওভারে উইকেটরক্ষক লিটন কুমারের সহয়তায় তিনি আবারও ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে ফেরান। স্ট্যাম্পিং এর শিকার হয়ে ২১ রানে ফেরেন ধনঞ্জয়া।

নিজের প্রথম ওভারের মতো শেষ ওভারের শেষ বলে দাশুন শানাকাকে ফেরান তাসকিন আহমেদ। শ্রীলঙ্কা ৭ উইকেট হারিয়ে ১১৫ রান তোলে ১৮ ওভারে। তাসকিনের আহমেদের মতোই শেষ ওভারে মাহেশ থিকশানার উইকেট নিয়ে ৪ ওভারে মাত্র ১৭ রান দিয়ে এদিন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট শিকার করেন মুস্তাফিজুর রহমান। প্রথম ইনিংসের শেষ ওভারে টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আঞ্জেলো ম্যাথিউসকে ফিরিয়ে নিজের প্রথম বিশ্বকাপ উইকেট তুলে নেন তানজিম হাসান সাকিব। বাংলাদেশকে ২০ ওভারে ১২৫ রানের টার্গেট দেয় শ্রীলংকা।

টাইগারদের এ জয়ে জাতীয় ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার সকালে এক অভিনন্দন বার্তায় ক্রিকেটপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ক্রিকেট দলের সব খেলোয়াড়, কোচ, কর্মকর্তা এবং বিসিবির (বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।  

জয়ের পেছনে বড় বিপদের শঙ্কা

এ ম্যাচে সেই আগের মতোই অবশ্য ভুগতে হয়েছে বাংলাদেশকে। যেহেতু জয় এসেছে সেই জয়ের পিছনে এই ব্যর্থতা হয়তো চাপা পড়েছে। তারপরও বাংলাদেশের টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে ভাবতে হবে হাথুরুসিংহে ও টিম ম্যানেজমেন্টকে। এদিন কোন আন্তর্জাতিক প্লেয়ার হিসেবে টি টোয়েন্টিতে গড়েছেন ১৩ ইনিংসে শুন্য রানে ঘরে ফেরার ব্যর্থতার রেকর্ড। যেখানে তার এই ব্যর্থতা অর্জন করতে সময় লেগেছে ৮৩ ইনিংস। সেখানে এই ‘আনলাকি থার্টিন’ এর তকমা গায়ে লাগাতে আইরিশ পল স্টার্লিং এর সময় লেগেছে ১৪৩ ইনিংস। এদিকে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৫বার শুন্য রানে আউট হবার রেকর্ড আছে দুই কিংবদন্তির। একজন পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদি, অন্যজন শ্রীলংকান তিলকারত্নে দিলশান। গতকালের ম্যাচ মিলিয়ে সৌম্য টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মোট ৪ বার আউট হয়েছেন ০ রানে। আর একটি মাত্র ম্যাচে এই সুযোগ হাতছাড়া সৌম্য সরকার করতে পারে কিনা তাই দেখার বিষয়।  

সংবাদ সম্মেলনে এসে ব্যাটিং বিপর্যয়ের বিষয়ে বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত জানিয়েছেন, ব্যাটসম্যানরা সবাই জানে যে আমরা হয়তো ভালো ব্যাটিং করিনি এবং সবাই প্রতিদিন ভালো খেলবে না। যেমন হৃদয় খুবই ভালো ব্যাটিং করেছে, রিয়াদ ভাই খেলাটা শেষ করল। ম্যাচে সবার শরীরী ভাষা দারুণ ছিল। আমরা নিজেদের ১২০ শতাংশ দিয়ে খেলেছি। এমন উইকেটে আমাদের আরও সহজে জেতা উচিত ছিল।’এই ধরণের চাপের ম্যাচে এরকম হবে। ওদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ ছিলো। ওরা অনেক চেষ্টা করেছে। দিনশেষে দুইটা পয়েন্ট পেয়েছে, এজন্য ভালো লাগছে।' আমি আশা করব যে যেদিন ভালো খেলবে, সে যেন খেলাটা জেতায়। এমন না যে সাতটা ব্যাটসম্যানই ভালো খেলবে।

আগামী ১০ জুন সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে নাসাউ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মাঠে নামবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।

 

আ.দৈ/ এমএমএস 

Link copied!