আজকের দৈনিক | এম মাহীউজ্জামান শাওন
প্রকাশিত: এপ্রিল ২, ২০২৪, ১২:৫৬ পিএম
শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশের দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচের তৃতীয় দিনে দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ২৫ ওভারেই ৬ উইকেট হারিয়েছে সফরকারী দল। আর রান তুলতে পেরেছে মাত্র ১০২। বাংলাদেশের হাসান মাহমুদ একাই নিয়েছেন ৪টি উইকেট। বাংলাদেশকে ফলো-অন না করিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে তেমন সুবিধা করতে পারেনি লঙ্কানরা। এই ম্যাচে দুই ইনিংস মিলিয়ে শ্রীলংকা ইতোমধ্যে ৪৫৫ রানের লিড দিয়েছে। আজ চতুর্থ দিনে মাঠে নেমে শেষ পর্যন্ত তারা কত রানের লিড দেয় তা দেখার বিষয়। তবে ধারণা করা যাচ্ছে সফরকারী দেশটি বাংলার টাইগারদের সামনে ৫শ’র বেশি রান ছুড়ে দিতে পারে। এমন অবস্থায় দ্বিতীয় ইনিংসে ৫শ রান তাড়া করে ম্যাচ জিতে নেয়া অসম্ভব। ঘরের মাটিতে প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ জয়ের আশা থাকলেও তা আদৌও সম্ভব হচ্ছে কি হাথুরুসিংহের দলের? তৃতীয় দিনে উইকেটের যা চরিত্র তাতে পরাজয় এড়িয়ে ম্যাচ ড্র`ই হতে পারে টার্গেট।
শুরুতেই বলা বাহুল্য যে, এপর্যন্ত লঙ্কানদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্বাদ পেলেও টেস্টের ইতিহাসে তাদের বিপক্ষে মাঠে নেমেছে টাইগাররা ২৫টি বার। তবে মাত্র একটিতেই জয় তুলতে সক্ষম হয়েছিল বাংলাদেশ। এটিই এটি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম জয়। সেটি অবশ্য সম্ভব হয়েছিল সিরিজসেরা সাকিব আল হাসান ১১৬ (১৫৯) বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাটিং এর ওপর ভর করেই। বল হাতেও তিনি ক্ষিপ্রতা দেখিয়েছিলেন। সেই মাচের দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৬.২ ওভারে মাত্র ৭৪ রানেই তুলেছিলেন ৪টি উইকেট। ১৩৪.১ ওভারে বাংলাদেশ কলোম্বোর মাটিতে তুলেছিল ৪৬৭ রান। টেস্ট সিরিজটি ১-১-এ ড্র হয়। প্রথম ম্যাচটি বাংলাদেশ ২৫৯ রানে পরাজিত হলেও দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ জয় পেয়েছিল। ১০০তম টেস্ট খেলার দিনে এটি ছিল বাংলাদেশের নবম জয় এবং বিদেশের মাটিতে চতুর্থ জয়।
বর্তমানে ফিরে আসা যাক। আজ দ্বিতীয় টেস্টের চতুর্থ দিনের খেলা মাঠে গড়াবে। লঙ্কানদের হাতে আছে এখনো চারটি উইকেট। ইতোমধ্যে ৪৫৫ রানের লিডে রয়েছে তারা। তৃতীয় দিন শেষেও বিশাল ব্যবধানে এগিয়ে লঙ্কানরা। যেখানে প্রথম ইনিংসের লিড ছিল ৩৫৩ রানের।
প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং এ নেমে ৪৭ থেকে ৯৬ রানে দুই উইকেট হারানোর পরই ব্যাটিং অর্ডারে ধস নামায় লঙ্কান বোলাররা। রীতিমতো আসা যাওয়ার মধ্যেই থাকে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ১৭৮ রানেই শেষ হয় বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটিং ইনিংস। প্রথম ইনিংসে ৫৩১ রান ছিলো শ্রীলঙ্কার স্কোর। টেস্টে সেঞ্চুরি ছাড়া যেটি দলীয় সর্বোচ্চ। টেস্টের ইতিহাসে আগের সর্বোচ্চ স্কোর যেখানে ছিল ৫২৪। ১৯৭৬ সালে কানপুরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের। বাংলাদেশের কন্ডিশনে এসেও এমন দুর্ভোগই পোহাতে হচ্ছে বাংলাদেশের। দোষটা অবশ্য প্লেয়ার- ফিল্ডিং কন্ডিশন- ব্যাটিং লাইনআপ অনেক কিছুর ওপরেই দেয়া যায়। তবে বাংলাদেশের পরিবেশে এসে লাল বলের এই সমস্যা বহুবারই হয়েছে। যা দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংকরা যেকোনো দলকেই ভুগিয়েছে। সমস্যার কথা বলতে গেলে একটিই উঠে আসছে। আর তা হলো টেস্টখ্যাত কোকাবুরা বল নরম হয়ে যাওয়া। শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই না এশিয়া উপমহাদেশে অবস্থিত ভারত, পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও একই সমস্যার কথা কোন না কোন টেস্ট সিরিজে বারংবার উঠে এসেছে।
আজ মাঠে নেমেই বাংলাদেশের ব্যাটিং এর ওপরে ভর করেই জাকির- মিরাজ-শান্ত-সাকিবদেরই জয়ের লক্ষ্য তাড়া করতে হবে । লঙ্কানদের কত কি রেকর্ড হলো এগুলো বাংলাদেশকে বিবেচনা না করে ব্যাটিং এ মনোযোগ দেয়ার তাগিদ জানিয়েছেন বাংলাদেশের বর্তমান ব্যাটিং কোচ ডেভিড হেম্প।
মমিনুল-নাজমুলরা তা করতে পারবেন বলে আস্থা হেম্পের। তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, 'ওরা ভালো খেলোয়াড়। এখন তাদের ভালো সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কোন বলটা মারতে হবে, কোনটা থামাতে হবে। ভালো দলের ব্যাটসম্যানরা ব্যাটিংয়ের সময় ভালো সিদ্ধান্ত নেয় এবং সেটা লম্বা সময় ধরে নেয়। আপনাকে বোলারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।' হেম্প উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের গত ব্যাটিং ইনিংসের বিকেলের প্রায় দেড় ঘণ্টায় বাংলাদেশ দলের দুই ওপেনারের ৪৭ রানের জুটির উদাহরণ টেনেছেন। সিলেট টেস্টের দুই ইনিংসের তুলনায় দুজনই যে ভালো ব্যাটিং করেছেন, মনে করিয়ে দিয়েছেন সেই বিষয়টাও। এর জন্য বাংলাদেশকে ক্রিজে সময় কাটাতে হবে। যত সময় যাবে, উইকেট ভাঙার আশঙ্কার ততই বাড়বে। আর ভাঙা উইকেটে যেকোনো কিছুই হতে পারে। ম্যাচের অবস্থাটাকে সে জায়গায় ঠেলে নিতে নেওয়ার একটাই উপায়-ম্যারাথন ব্যাটিং।
এদিকে গতকাল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিলেট টেস্টের পর চট্টগ্রামেও ব্যাটিং–ব্যর্থতার কারণ জানতে চাইলে জাকির সরাসরি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন,‘আসলে কারণটা আর কী বলব, আমরা টোটালি ফেল করেছি। আমরা কেউ পটেনশিয়াল অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারিনি। আমার কাছে মনে হয় যে আমাদের যে রোলটা ছিল, ওই রোলটাও আমরা পালন করতে পারিনি। ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে আমাদের যেমন খেলার কথা ছিল, হয়তো আমরা ও রকম খেলতে পারিনি।
ক্যাচ নেওয়ার ক্ষেত্রেও জাকিরের কথার সুরে ছিল অনুশোচনা, ‘অবশ্যই ক্যাচ ড্রপ হলে সবার খারাপ লাগে। এই ম্যাচেও আমাদের অনেক ক্যাচ ড্রপ হয়েছে। আসলে এটা তো কোনো এক্সকিউজ হতে পারে না। চেষ্টা করছি ইনশাআল্লাহ ওই জায়গায় উন্নতি করার।’
এখন দেখার বিষয় শেষমেশ শ্রীলঙ্কার দেয়া ৫১১ রানের টার্গেট কতটুকু সামলে নিতে পারে টিম বাংলাদেশ।
আ.দৈ/এ রউফ
আপনার মতামত লিখুন :