গণমাধ্যমকে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, ‘এ সরকার সবার কাছে উদাহরণ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।
আমাদের ভুলত্রুটি, অন্যায় থাকলে জোর গলায় বলেন, জোর কলমে লেখেন। আমাদের দেখিয়ে দেন, আপনার এখানে ভুল হচ্ছে। এটাই সাংবাদিকতা হওয়া উচিত। এমন সাংবাদিকতা হওয়া উচিত, যা প্রত্যেকটা সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে।’
আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন হলে ‘ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম চাই ব্যানারে গণমাধ্যমের ফ্যাসিবাদী বয়ান: ফিরে দেখা ১-৩৬ জুলাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। জয়নাল আবেদিন শিশিরের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি শহীদুল ইসলাম ও শিবিরের প্রকাশনা সম্পাদক সাদিক কায়েম।
শফিকুল আলম বলেন, ‘কিছুদিন আগে একটি বড় পত্রিকা প্রফেসর ইউনূসের প্রশংসাসূচক লেখা লিখেছে, আমরা তাদের ফোন করে বলেছি, এটা লেখার দরকার নেই। আপনি গঠনমূলক সমালোচনা করেন, প্রশংসা করার তো দরকার নেই। আমরা চাই প্রত্যেকটা বিষয় তুলে ধরেন। বাংলাদেশের সাংবাদিকতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময় যাচ্ছে।’
প্রেস সচিব বলেন, ‘আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে সবার কথা বলার সুযোগ থাকবে। আমাদের সমালোচনা করবে, তাকেও আমরা ধারণ করতে চাই। সবাই মিলে একটা বড় বাংলাদেশ গড়তে চাই।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় অনেক গণমাধ্যম ও সাংবাদিকের ভালো ভূমিকা ছিল বলে উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, ‘অসহনীয় পরিবেশে স্বৈরাচারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সাংবাদিকতা করেছেন, আন্দোলনে কতজন মারা গেছেন তার হিসাব দিয়েছেন, কারণ তখনো প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি। একদিকে ডিজিএফআইয়ের ফোনকল, আরেকদিকে রাজনীতিবিদের ফোনকল, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও সাংবাদিক লীগের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে বেশ কিছু সংবাদপত্র ভালো সাংবাদিকতা করেছে।’
আওয়ামী লীগ আমলে পুলিশি তাণ্ডবের কথা তুলে ধরে শফিকুল আলম বলেন, সাংবাদিকদের বড় গ্রুপগুলো নৃশংসতা চালানো পুলিশের পক্ষে বয়ান দিত, তারা প্রমাণ করত লোকটাকে মারা দরকার আছে, না মারলে দেশ এগোতে পারবে না। বেসরকারি উদ্যোগে এসব কর্মকাণ্ডের গবেষণা প্রতিবেদন তৈরির অনুরোধ করেন প্রেস সচিব।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে সবার মতামত তুলে ধরার অনুরোধ জানান প্রেস সচিব। তিনি বলেন, আমরা এমন একটা বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই, যেখানে কেউ ফ্যাসিবাদের বয়ান তৈরি করবে না। কোনো দলকে অন্ধের মতো অনুসরণ করবেন না। সবাই মিলে এমন একটা দেশ গড়ি, যাতে সবার বক্তব্য শোনা যায়।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ফেব্রুয়ারির শেষে জমা হতে পারে বলে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, প্রতিবেদন নিয়ে প্রত্যেকটা সাংবাদিক গ্রুপ আলোচনা করবে। বাকস্বাধীনতার কথা কমিশনের প্রস্তাবে আসছে কি না, সেটা দেখবে। আশা করি নতুন একটি মুক্ত গণমাধ্যম পাব। যেখানে সবাই অকুতোভয়ে যেকোনো শক্তিশালী মানুষ ও পক্ষকে জবাবদিহি করতে পারে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় কয়েকটি টিভি চ্যানেল শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাসী বলে আখ্যা দিয়েছিল বলে জানান প্রেস সচিব। তিনি বলেন, সবাই মিলে সন্ত্রাসী বলা মানে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মারার বৈধতা দেওয়া। কিন্তু তারা তো অস্ত্র নিয়ে আন্দোলন করেনি। হাত-পা-মুখ দিয়ে আন্দোলন করেছে, পথে নেমেছে; কিন্তু বলা হয়েছিল জঙ্গি, সন্ত্রাসী। অতীতের কর্মকাণ্ড সংশ্লিষ্টদের দেখার অনুরোধ করে তিনি বলেন, এগুলো করার মূল কারণ ছিল হয়তো পূর্বাচলের একটি প্লট। অ্যাকাউন্টে অনেক টাকা আসবে। কিছু কিছু প্রতিবেদনও আসছে। এক সাংবাদিকের হিসাবে দেখলাম ১ হাজার কোটি টাকার ওপর লেনদেন হয়েছে।
আ.দৈ/আরএস