শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
Ajker Dainik

এনএসআই’র কর্মকর্তা আকরাম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের মামলা দুদকের 

আজকের দৈনিক | নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: মে ২১, ২০২৪, ০৬:৩৪ পিএম

এনএসআই’র কর্মকর্তা আকরাম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের  মামলা দুদকের 
ফাইল ছবি-

জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তরের (এনএসআই) সহকারী পরিচালক ও প্রভাবশালী কর্মকর্তা মো. আকরাম হোসেন এবং তার স্ত্রী সুরাইয়া পারভীনের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমান স্থাবর ও অস্থাবর অবৈধ সম্পদ অর্জনের সুনিদিষ্ট তথ্য উপাত্বের ভিত্তিতে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মঙ্গলবার (২১ মে) দুদকের উপ পরিচালক মো. মশিউর রহমান বাদী হয়ে সমন্বীত জেলা ঢাকা-১এর কার্যালয়ে এনএসআই'র সহকারী পরিচালক মো. আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে ২০০৪ সালের দুদক আইনের ২৬(২), ২৭(১) এবং ১৮৬০ সালের দন্ড বিধির ১০৯ ধারায় একটি মমালা দাযের করেন। মামলা নম্বর-১৩। এই মামলায় মো.আকরাম হোসেন বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অর্থাৎ  অবৈধভাবে ৬ কোটি ৭০ লাখ ৩৯ হাজার ৩৬২ টাকার সম্পদ অর্জন এবং আরো ১ কোটি ৬১ লাখ ৭৯ হাজার ৫২০ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর  সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

অপর দিকে অভিযুক্ত মো. আকরাম হোসেনের স্ত্রী মিসেস সুরাইয়া পারভীনের বিরুদ্ধে ৬ কোটি ১২ লাখ ৫৮ হাজার ৯৯৬ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মালিকনা অর্জনের তথ্য 
পেয়েছে দুদক।এরমধ্যে তার বৈধ আয় উল্লেখ করা হয়েছে ৫ কোটি ৯১ লাখ ৬৫ হাজার ৪৪৫ টাকার সম্পদ।  অবৈধভাবে অর্জিত ২০ লাখ ৯৩ হাজার ৫৫১ টাকার  স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য। এই অভিযোগে মিসেস সুরাইয়া পারভীনের বিরুদ্ধে ২০০৪ সালের দুদক আইনের ২৭ (১) ধারায় পৃথক একটি মামলা দায়ের  করা হয়েছে। মা্মলা নম্বর- ১৪।

গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও উপ পরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম।  দুদকের সূত্র মতে, নাটোরের নওয়া পাড়া গ্রামের  একটি সাধারণ পরিবারের সন্তান মো. আকরাম হোসেন ১৯৮৯ সালে ১৮ ডিসেম্বর ‘এনএসআই’তে নিম্মমান সহকারী পদে চাকরিতে যোগদান করেন। এরপর তিনি ১৯৯৭ সালে ৯ নভেম্বর ‘এনএসআই তে বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে একজন জুনিয়র ফিল্ড অফিসার পদে যোগদান করেন। পরে ২০১৬ সালে ৯ নভেম্বর সহকারী পরিচালক পদে পদোন্নতি লাভ করেন তিনি।

সূত্র মতে,‘এনএসআই’তে চাকরি সুবাদে দ্রুত অবৈধ প্রভাব বিস্তার করে সহকারী পরিচালক মো. আকরাম হোসেন রাজধানীর মিরপুর সেনপাড়া, রাজধানীর দক্ষিণ খান, সাভার, কক্সবাজার এবং তার নিজ এলাকা নাটোরে বিভিন্ন মৌজায় ১৮টি দলিলে উল্লেখ রয়েছে প্রায় ৭ কোটি ৪৮ লাখ ৬৪ হাজার ৩৮৬ টাকার বাড়ি, প্লট, প্ল্যাট, দোকান এবং কৃষি জমির মালিক হয়েছেন। এছাড়া তিনি আরো ৬৩ লাখ ১৯ হাজার ৫০১ টাকার অস্থাবর সম্পদের মালিক হয়েছেন।

তবে ২০২১ সাল পর্যন্ত চাকরির বেতনভাতাসহ অন্যান্য উৎস্য থেকে তার বৈধ আয়ের পরিমান মাত্র এক কোটি ৬৬ লাখ ৬০ হাজার ২১ টাকা । কিন্তু আকরাম হোসেনের বিপুল পরিমান সম্পদ অর্জনের বিষয়টি দুদকের অনুসন্ধানেই বেরিয়ে এসেছে।

দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে,  মো. আকরাম হোসেন জ্ঞাত আয় বহির্ভূতভাবে ৬ কোটি ৭০ লাখ ৩৯ হাজার ৩৬২ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। আর তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ২০ লাখ ৯৩ হাজার ৫৫১ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন। স্বামী-স্ত্রীর মোট জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অর্থাৎ অবৈধ ৬ কোটি ৯১ লাখ ৩২ হাজার টাকার সম্পদ রয়েছে আকরাম ও তার স্ত্রীর।

দুদকের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। গত ০৭ মার্চ (২০২৪ সাল) দুদকের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে  এনএসআই’র সহকারী পরিচালক মো. আকরাম হোসেন এবং তার স্ত্রী মিসেস সুরাইয়া পারভীনের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমান স্থাবর ও অস্থাবর অবৈধ সম্পদে মালিকনা অর্জনের সুনিদিষ্ট অভিযোগ্ই তাদের বিরুদ্ধে সুনিদিষ্ট ধারায় মামলা দাযের করা হয়েছে।

এনএসআই’র অভিযুক্ত সহকারী পরিচালক মো. আকরাম হোসেনের দাখিল করা সম্পদ বিবরণী যাচাই বাছাই করে দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা পেয়েছেন,  ২০০২ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত ১৮টি দলিলে ৭ কোটি ৪৮ লাখ ৬৪ হাজার ৩৮৬ টাকার জমি, বাড়ি, দোকান, প্লট, ফ্ল্যাট (স্থাবর) ক্রয় সুত্রে মালিকনার বিষয়টি। সেই সাথে ক্রয় করা একাধিক জমিতে বাড়ি নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক আরো ব্যয় এক কোটি ৬১ লাখ ৭৯ হাজার ৫২০ টাকা। আকরাম হোসেনের দাখিলকৃত বিবরণীতে  ৫ কোটি ৮৬ লাখ ৮৪ হাজার ৮৬৬ টাকা মূল্যের এসব সম্পদে তথ্য রয়েছে। তিনি দাখিল করা বিবরণীতে সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন, এক কোটি ৬১ লাখ ৭৯ হাজার ৫২০ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর  সম্পদের বিষয়টি। এসব অভিযোগে অভিযুক্ত মো. আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে ২০০৪ সালের দুদক আইনের ২৬(২), ২৭(১) এবং ১৮৬০ সালের দন্ড বিধির ১০৯ ধারায় ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

অপর দিকে তার স্ত্রী মিসেস সুরাইয়া পারভীনের বিরুদ্ধে ৬ কোটি ১২ লাখ ৫৮ হাজার ৯৯৬ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মালিকনা অর্জনের তথ্য দাখিলকৃত বিবরণীতে রয়েছে। এরমধ্যে তার বৈধ আয় রয়েছে ৫ কোটি ৯১ লাখ ৬৫ হাজার ৪৪৫ টাকার সম্পদ। তার বিরুদ্ধেও অবৈধ আয় পেয়েছে ২০ লাখ ৯৩ হাজার ৫৫১ টাকার  স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য। দুদকের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে ২০০৪ সালের দুদক আইনের ২৭ (১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।


আ. দৈনিক/ একে

Link copied!