আজকের দৈনিক | শরীয়তপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: মে ১৩, ২০২৪, ০৮:১২ পিএম
ঘড়ির কাটা দুপুর ১২ টা ছুই ছুই। জাজিরা উপজেলার সেনেরচর মোল্লা কান্দির একটি কাদাভরা পুকুরে কিছু খুজতে দেখা যায় একজনকে।পুকুরের কাঁদায় তিনি কি যেনো খুঁজছেন। নাম তার খোকন বিশ্বাস। বাড়ি রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলায়। স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে এখন থাকেন জাজিরা উপজেলার টিএনটি মোড় এলাকায়।
খোকন বিশ্বাসের সাথে কথা হয় আজকের দৈনিকের। তিনি জানান, প্রায় দুই যুগ ধরে হাওর,ডোবা ও পুকুরসহ বিভিন্ন স্থানে কুইচা ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাঁর পরিবারের ভাত-কাপড়ের জোগান আসে প্রাকৃতিক উৎসের এই কুইচা মাছ ধরেই। ফাল্গুন মাস থেকে তাঁর কুচিয়া ধরার অভিযান শুরু হয়। চলে আশ্বিন মাস পর্যন্ত।
বিষয়টি নিয়ে খোকন বিশ্বাসের সাথে কথা হলে তিনি সংবাদ মাধ্যমেকে বলেন,দুই যুগ ধরে বিভিন্ন স্থানে কুইচা ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। একসময় কৃষি কাজ করলেও পরিবারের খরচ জোগান দিতেই কুইচা শিকার শুরু করেন। বর্তমানে দিনে চার থেকে ছয় কেজি কুইচা ধরেন। অন্য পেশার চেয়ে এ পেশায় ভালো আয় হচ্ছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, কুইচার বিদেশে অনেক চাহিদা তাই এর দামও অনেক বেশি। দিনে চার থেকে ছয় কেজি কুইচা শিকার করতে পারি। কেজি ৩১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কুইচা বিক্রি করে এখন সংসার চলছে।
উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে জানা যায়, কুইচা একটি ইল-প্রজাতির মাছ। Sybranchidae পরিবারের অন্তর্গত এই মাছটির বৈজ্ঞানিক নাম Monopterus cuchia। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের রক্ষিত বন্যপ্রাণীর তালিকার তফসিল ২ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।
আরও জানা যায়, দেশের প্রায় সব স্বাদুপানির জলাশয়েই যেমন, বিল, হাওর-বাঁওর, ডোবা নালায় এই মাছ দেখা যায়। পানির অগভীর ও তীরবর্তী অংশ ও পাড়ে মাটির গর্তে এই মাছের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। অনেক সময় এরা মাটির ওপরে এসে রোদে অবস্থানও করে। আবার কিছু সময় পুকুর খননে মাটির অনেক গভীরেও এদের দেখা মেলে।
জাজিরা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল শরীফ আজকের দৈনিককে বলেন, প্রাকৃতিকভাবে জলাশয়, ডোবা বা পুকুরে প্রচুর কুইচা জন্মায়। বিদেশে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আর এসব কুইচা শিকার অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করছেন। এতে বেকারত্ব দূর করাও সম্ভব। তবে যেসব কুইচা প্রাকৃতিকভাবে জলাশয়ে জন্ম নেয় এগুলো বিলুপ্তপ্রায়। তাই এগুলো শিকার করা আমাদের দেশে আইনগতভাবে নিষিদ্ধ।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া ইসলাম লুনা বলেন, কুইচা মাছ ধরে বিক্রি করে অনেকেই অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। বিদেশে এর চাহিদা ব্যাপক। বাণিজ্যিকভাবে কুঁইচা চাষ করা গেলে ও সরকারি উদ্যোগে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করা হলে জাতীয় অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকার পাশাপাশি কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে।
আ. দৈনিক / একে/রাজিব
আপনার মতামত লিখুন :