শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
Ajker Dainik
শরীয়তপুরে

আশ্রয়হীন বীরাঙ্গনা যোগমায়া মালোর রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি 

আজকের দৈনিক | নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রকাশিত: মার্চ ২৯, ২০২৪, ০৫:৫১ পিএম

আশ্রয়হীন বীরাঙ্গনা যোগমায়া মালোর রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি 

শরীয়তপুরে স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন আশ্রয়হীন বীরাঙ্গনা যোগমায়া মালো। তিনি ৫৩ বছর ধরে শরীর ও মনের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন।  একাত্তরে পাক হানাদার বাহিনীর পাশবিকতার ভয়াল স্মৃতি মনে পড়লে এখনো আঁতকে ওঠেন বীরাঙ্গনা যোগমায়া মালো। এখনো তিনি অন্যের আশ্রয়ে থাকেন। মাথা গোঁজার মতো ছোট্ট একটি ঘরও নেই তার। শেষ জীবনে একটি ঘরের আশ্বাস বারবার তাকে দেওয়া হলেও এখনো তিনি সেই ঘর পাননি।

১৯৭১ সালে ১৫ বছরের কিশোরী গৃহবধূ ছিলেন যোগমায়া মালো। একাত্তরের সেই ভয়াবহ সময়ের ২২ মে শরীয়তপুরের মনোহর বাজারের দক্ষিণ মধ্যপাড়ার হিন্দু বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায় পাকিস্তানি সেনারা। হামলার দিন তার স্বামী নেপাল চন্দ্র মালো গিয়েছিলেন মাছ ধরতে। কিশোরী গৃহবধূ যোগমায়া মালো একা বাড়িতে থাকায় অন্যদের সঙ্গে পালাতে সাহস করেননি। বাড়িতে একা পেয়ে রাজাকার ও পাক বাহিনী তাকে ঘর থেকে জোর করে নিয়ে যায় মাদারীপুরের এআর হাওলাদার জুট মিলে। তার সঙ্গে নেওয়া হয় আরও ৩০-৩৫ জন নারীকে। সেখানে পাঁচ দিন নির্যাতন সহ্য করার পর ছাড়া পান যোগমায়া মালো। পরে মানুষের কাছে জিজ্ঞেস করতে করতে বাড়িতে এসে স্বামীকে খুঁজে পান তিনি। তবে পাক বাহিনী ও রাজাকাররা তার বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছিল।

বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়লেও পাক বাহিনীর নির্যাতন এখনো তাকে ক্ষত-বিক্ষত করে। প্রায় ৩০ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি দক্ষিণ মধ্যপাড়া এলাকার একটি ছোট্ট টিনের ঘরে ভাড়া থাকেন। ভাড়া ঠিক বলা যায় না, বাড়ির মালিক দয়া করে ছেলে, পুত্রবধূ, নাতিসহ যোগমায়া মালোকে আশ্রয় দিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়ার পর যোগমায়া মালোকে আশ্রয় প্রকল্পের একটি ঘরে থাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তবে যোগমায়া সেখানে থাকতে রাজি হননি।

 পরবর্তীতে তাকে জানানো হয়, নিজস্ব জমি থাকলে ‘বীর নিবাস’ নির্মাণ করে দেওয়া হবে। ছেলে অশোক মালো ও উত্তম মালো পেশায় জেলে। ঋণ করে তারা তিন বছর আগে মায়ের নামে ৪ শতাংশ জমি কিনেছেন একটি ঘর পাবেন বলে। কিন্তু সেই ঘর এখনো পাননি যোগমায়া মালো। মৃত্যুর আগে যদি মাথার গোঁজার একটি ঘর পেতেন তাহলে নিজের ঘরে বসে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে পারতেন বাঙালি জাতির এই শ্রেষ্ঠ মা।

উপজেলা ও জেলা প্রশাসন তাকে একটি বীর নিবাস তৈরি করে দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছে। কিন্তু এখনো ঘরটি তিনি পাননি। যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে যোগমায়া মালো ঘরটি পান, তাহলে বাকি জীবন তিনি স্বাচ্ছন্দ্যে পার করতে পারবেন।

এ বিষয়ে শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাইনউদ্দিন  বলেন, তাকে এখনো বীর নিবাস দেওয়া যায়নি, কারণ তার নামে জমি ছিল না। তবে জানতে পেরেছি এখন তার নামে জমি রয়েছে। তার নামে থাকা জমির নথিপত্র আমাদের কাছে তিনি দিয়েছেন। পরবর্তী ধাপে আমরা তাকে একটি বীর নিবাস নির্মাণ করে দেওয়ার চেষ্টা করব। পাশাপাশি যেকোনো প্রয়োজনে উপজেলা প্রশাসন তার পাশে থাকবে।
আ. দৈনিক / একে /কেয়া

Link copied!