সাকিব আল হাসান - সহজভাবে বললে যে নাম বিশেষভাবেই গত দেড় যুগ ধরেই বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়েছে গোটা বিশ্বের কাছে, ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে। জিম্বাবুয়ের হারারেতে আন্তর্জাতিকে পথ চলা শুরু করা বাংলার এই নক্ষত্রের কি তবে পতন হচ্ছে ভারতের কানপুরেই নাকি দেশের হয়ে শেষ ম্যাচটিও তিনি খেলবেন দেশের মাটিতেই। আজ বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) কানপুরে সংবাদ সম্মেলনে বাংলার বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে ঘিরে যেন সংবাদকর্মীদের জটলা লেগে গেলো। সবাই সাকিবকে ঘিরে ধরলেন। সবাই যেন আবেগআপ্লূত হয়ে পড়েছেন। কারণ একটাই। সাকিব নিজেই টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির থেকে নিজেকে সরিয়ে নেবার কথা জানিয়ে দিয়েছেন।
'আমার মনে হয় টি-টোয়েন্টিতে আমি আমার শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছি, মিরপুর টেস্টে (দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে) খেলতে পারলে সেটি হবে আমার শেষ টেস্ট' - সাকিব নিজের অবসর প্রসঙ্গে এটাই বলেছেন। তবে আগামী বছর একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্তই তাঁকে মাঠে দেখতে পাবেন বাঙালিরা। এ ব্যাপারে আজ বৃহস্পতিবার তিনি প্রেস ব্রিফিং এ জানান, “যদি সুযোগ থাকে, আমি যদি দেশে যাই, খেলতে পারি, তাহলে মিরপুর টেস্ট হবে আমার জন্য শেষ। সেই কথাটা বোর্ডের সবার সঙ্গে বলা হয়েছে'।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, রাজনৈতিক ইস্যুকে কেন্দ্র করে আওয়ামী সরকারের মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানের বাংলাদেশে আসা নিয়ে গত দু’মাস ধরে নানা রকমের কথাবার্তা-সমালোচনা হয়ে আসছে। মুখে মুখেই ভেসে আসছে সাকিবের নাম। সরকার পতনের পর সাকিব আল হাসান অন্যান্য সাবেক মন্ত্রিদের মতোই নিজের নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। তিনি বলেন, দেশে যেহেতু অনেক পরিস্থিতি চলছে, সবকিছু অবশ্যই আমার ওপরে না। আমি বিসিবির সঙ্গে এসব নিয়ে আলোচনা করেছি। তাদের বলা হয়েছে আমার কী পরিকল্পনা। এই সিরিজ আর হোম সিরিজটা আমি ফিল করেছিলাম আমার শেষ সিরিজ হবে, টেস্ট ক্রিকেটে স্পেশালি। তবে এক্ষেত্রেও তিনি নিজের দেশের হয়ে খেলার জন্যও বিদেশি খেলোয়াড়দের মতো বিসিবির (বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড) নিরাপত্তা বিষয়কেই গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।
সাকিব বলেন- আমিও বাংলাদেশের একজন নাগরিক। আমার দেশে ফিরে যেতে কোন আপত্তি নেই। তবে আমার নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে আমার পরিবারের সকলে উদ্বিগ্ন হয়ে রয়েছেন। আমি আশাবাদী এগুলোর খুব শীঘ্রই সমাধান আসবে। যেহেতু বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আদাবরে পোশাক কারখানার কর্মী মো. রুবেল হত্যার ঘটনায় তার বাবা রফিকুল ইসলামের করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আরও অনেকের সঙ্গে আসামি করা হয় বাংলাদেশের অন্যতম সফল ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে।
এদিকে সম্প্রীতি শেয়ার বাজার কারসাজির অভিযোগে তাঁকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ ব্যাপারে সাকিব নিজের খেলা চালিয়ে যাবার প্রসঙ্গে বলেন, ‘কঠিন অনেক কঠিন। আমি কীভাবে মনোযোগ ধরে রাখছি এটা আল্লাহই জানে। আমি নিজেও জানি না। একটা মামলা হয়েছে। সবারই অধিকার আছে। আপনারা সবাই জানেন এটা কেমন ধরনের মামলা বা তখন কোথায় ছিলাম বা আমার কাজ কী ছিল। এই বিষয়টা নিয়ে আসলে খুব বেশি কথা বলতে চাই না।
দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভার সামলেছেন তিনি। বাংলার ক্রিকেটের নানান উথান পতনের সাক্ষী জার্সি নম্বর সেভেন্টি ফাইভ। বিকেল গড়িয়ে যেমন সন্ধ্যেতে খেলার সময় শেষ হয়ে যায় ঠিক নিজের শেষ হয়ে আসা খেলার সময়েরই আভাস স্পষ্ট করলেন সাকিব। ২০০৬ সালের আগস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথ চলা সাকিবের। এ পর্যন্ত ১৮ বছরের ক্যারিয়ারে ১২৯টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। বাংলাদেশের পক্ষে টি-টোয়েন্টিতে মোট ২,৫৫১ রান সংগ্রহ করেছেন এবং ১৪৯ উইকেটের মালিক তিনি।
২০০৯ সালে মাশরাফির অনুপস্থিতে প্রথম বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়কের ভূমিকায় আসেন সাকিব। ২০০৭ সালের ১৮ মে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকের পর এবং আগামীকাল ভারতের কানপুরের দ্বিতীয় টেস্টে নামার আগপর্যন্ত ৭০ টেস্ট খেলে ৩৮.৩৩ গড়ে করেছেন ৪,৬০০ রানের দেখা পেয়েছেন। দেশের হয়ে টেস্টে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বল হাতে নিয়েছেন ২৪২টি উইকেট। সেঞ্চুরি আছে ৫টি, অর্ধশতক ৩১টি। অবশ্য জানা যায়, আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার থেকে তিনি বিদায় নিলেও টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলে যাবেন।
আ. দৈ. /কাশেম /মাহী