ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ডিএনসিসির সচিবসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ওপেন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ, সাবেক মেয়র মো.আতিকুল ইসলাম ও মেয়র দপ্তরের সিন্ডিকেটের অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এসএম শফিকুর রহমান।
গত ০১ সেপ্টেম্বর (রোববার) ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ নানা অপকর্মের দায়ে আলোচনায় থাকা প্রকৌশলী এসএম শফিকুর রহমানকে নগর পরিকল্পনা বিভাগে স্থপতি পদে বদলি করেন। কর্তৃপক্ষ একই আদেশে অঞ্চল-৭ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো.ফরহাদকে নির্বাহী প্রকৌশলী (ডিসপোজাল) বিভাগে বদলি করেন এবং তাকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের দায়িত্ব প্রদান করেন।
কিন্তু এখনো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এসএম শফিকুর রহমান বদলিকৃত নতুন দপ্তরে না গিয়ে আগের দপ্তর নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। ডিএনসিসিতে বির্তকিত প্রকৌশলী এস এম শফিকুর রহমান ইতোমধ্যে ঘোষনা দিয়েছেন কোন অবস্থাতেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের আমিনবাজার ল্যান্ডফিল্ডের দপ্তর এবং ল্যান্ডফিল্ডের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের পিডির দায়িত্ব হাতছাড়া করবেন না। এই জন্য যা প্রয়োজন তিনি তাই নাকি করবেন।
তাই প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ওই দপ্তরের কক্ষটি দখল করে রাখেন। ফলে নতুন দায়িত্ব নির্বাহী প্রকৌশলী মো.ফরহাদ ওই দপ্তরের নির্ধারিত কক্ষে ঢুকতে পারছেন না। তাকে নথিপত্র বুঝিয়ে না দিয়ে হয়রানী করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
সূত্র মতে, প্রকৌশলী মো.ফরহাদ কর্তৃপক্ষের আদেশের প্রতি সম্মান জানিয়ে পরদিনই বদলিকৃত নতুন দপ্তরে এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের হাজির হয়ে যোগদান করেন। কিন্তু আজ বুধবার (০৪ সেপ্টম্বর) বিকেল পর্যন্ত তাকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা না করে উল্টো বাধা প্রদানের অভিযোগ উঠেছে প্রকৌশলী এস এম শফিকুর রহমান বিরুদ্ধে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডিএনসিসি’র প্রশাসক, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ডিএনসিসির সচিবসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ওপেন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন সাবেক মেয়র সিন্ডিকেটের সদস্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের বির্তকিত প্রকৌশলী এস এম শফিকুর রহমান। তিনি ওপেন ঘোষণা দিয়েছেন, তার পরিবারে বিএনপির নেতা আছে।
যারফলে কোন অবস্থাতেই তিনি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের আমিনবাজার ল্যান্ডফিল্ডের দপ্তর এবং ল্যান্ডফিল্ডের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্ডের পিডির দায়িত্ব হাত ছাড়া করবেন না।তিনি প্রকৌশলী মো.ফরহাদকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের নির্ধারিত কক্ষে ঢুকতে দিচ্ছেন না এবং তাকে নথিপত্র বুঝিয়ে না দিয়ে হয়রানী করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
সূত্র মতে, নতুন যোগদানকারী প্রকৌশলী মো. ফরহাদ যথারীতি যোগদান করলেও এস এম শফিকুর রহমান টানা ৩দিন যাবৎ চেয়ারে বসে আছেন।
এর আগে তিনি সাবেক মেয়র মো. অতিকুল ইসলাম এবং সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের ক্ষমতার জোরে ডিএনসিসিতে একছত্র আধিপত্য বিস্তার করে ছিলেন। তার কাছে সাবেক প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এস এম শরীফুল ইসলাম এক ধরনের জিম্মি অবস্থায় ছিলেন। প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাকে অগ্রাহ্য করে চতুরতার সাথে নানা কৌশলে নিজের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেন প্রকৌশলী শফিকুর রহমান। সাবেক প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এস এম শরীফুল ইসলাম একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তার সরলতাকে তিনি নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতেন।
সর্বশেষ খবরে জানা যায়, নগর পরিকল্পনা বিভাগে স্থপতি পদের বদলির আদেশ বাতিল করার হীনস্বার্থে প্রকৌশলী শফিকুর রহমান একটি রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের মাধ্যমে ডিএনসিসির উর্ধতন কর্মকর্তার ম্যানেজ করার জন্য তদবির শুরু করছেন।
প্রকৌশলী শফিকুর রহমান আমিনবাজার ল্যান্ডফিলের পিডির বিভিন্ন কাজের লেনদেন ও ফাইলের কার্যক্রম গোপনে সম্পন্ন করতেই দপ্তর নিয়ন্ত্রণে রাখছেন। উল্লেখ্য বর্জ্য বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ডিসপোজাল ও তত্তাবধায়ক প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকার সুবাধেই তিনি ল্যান্ডফিলের পিডি’র দায়িত্ব বাগিয়ে নিয়েছেন।
কূটকোশলী এস এম শফিকুর রহমান বরিশাল সিটি কর্পোরেশন থেকে গত সরকারের আমলে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে জাহাঙ্গীর কবির নানকের সুপারিশের মাধ্যমে ডিএনসিসিতে নিয়োগ ভাগিয়ে নিয়েছেন। এরপর আওয়ামী লীগের এই প্রভাবশালী মন্ত্রীর রেফারেন্সেই কর্পোরেশনে আধিপত্য বিস্তার করতেন। এমনকি ডিএনসিসির বেশ কয়জন কর্মকর্তাকে সাথে নিয়ে তিনি মোহাম্মদপুরে জাহাঙ্গীর কবির নানকের বাসায় নিয়মিত গোপন বৈঠক করতেন এমন অভিযোগও লোকজনের মুখে মুখে শোনা যায়।
এমনকি সাবেক প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার বিদেশ ভ্রমণজনিত অনুপস্থিতিকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত না হয়েও তিনি নিজেই প্রধান বর্জ্য বযবস্থাপনা কর্মকর্তা হিসেবে কার্যক্রম চালিয়েছেন। এখনো রসই প্রভাব ধরে রাখাতে নানা কৌশলতা অবলম্বন করছেন। অথচ ছাত্রজনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশ এবং দুর্নীতি মুক্ত ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত হবে। সেই লক্ষ্যে অনতিবিলম্বে দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন করতে সংস্কার কাজ সম্পন্ন হওয়া প্রয়োজন মনে করেন ডিএনসিসির সাধারণ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
আ. দৈ. /কাশেম