‘তুমি কি দেখেছো কভু জীবনের পরাজয়’, ‘ওরে নীল দরিয়া’সহ অনেক জনপ্রিয় গানের শিল্পী আব্দুল জব্বার। দেশের গান, আধুনিক গান ছাড়াও তিনি সিনেমার গানেও সমান শ্রোতাপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন। বিচিত্রমুখী বাংলা গানের মাধ্যমে এই শিল্পী সংগীত ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছেন। ২০১৭ সালের আজকের (৩০ আগস্ট) দিনে এই শিল্পীর অনন্তের পথে পাড়ি জমান।
শিল্পী আব্দুল জব্বার শুধু সংগীত অন্তপ্রাণ মানুষই ছিলেন না, ছিলেন একজন খাঁটি দেশপ্রেমিকও। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠশিল্পী হিসেবেও মুক্তিযুদ্ধে অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে তার কণ্ঠের জাগরণী গান মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দীপ্ত করেছে।
দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করতে শিল্পী আব্দুল
জব্বার গলায় হারমোনিয়াম ঝুলিয়ে কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের
ক্যাম্পে ঘুরে ঘুরে গণসংগীত পরিবেশন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতীয়
প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে
জনমত ও ফান্ড তৈরিতে মুম্বাইয়ের বিভিন্ন জায়গায় গণসংগীত পরিবেশন করেছেন।
১৯৫৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তান বেতারে গান গাওয়া শুরু করেন আব্দুল জব্বার।
চলচ্চিত্রে তিনি ১৯৬২ সালে প্রথম গান গেয়েছিলেন। ১৯৬৪ সালে তিনি বিটিভির
তালিকাভুক্ত শিল্পী হন। শিল্পী আব্দুল জব্বার ১৯৬৪ সালে জহির রায়হান
নির্মিত ‘সংগম’ সিনেমার গানে কণ্ঠ দেন। ১৯৬৮ সালে ‘এতটুকু আশা’ সিনেমায়
সত্য সাহার সুরে তার গাওয়া ‘তুমি কি দেখেছ কভু’ তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। একই
বছর ‘পীচ ঢালা পথ’ সিনেমায় রবীন ঘোষের সুরে ‘পীচ ঢালা এই পথটারে
ভালোবেসেছি’ ও ‘ঢেউয়ের পর ঢেউ’ সিনেমায় রাজা হোসেন খানের সুরে ‘সুচরিতা
যেওনাকো, আর কিছুক্ষণ থাকো’ এ দুটি গান তাকে শিল্পী হিসেবে অনন্য উচ্চতায়
নিয়ে যায়। ১৯৭৮ সালে ‘সারেং বৌ’ সিনেমায় আলম খানের সুরে ‘ও রে নীল দরিয়া’
গানটি ইতিহাস সৃষ্টি করে।
আব্দুল জব্বারের গাওয়া ‘তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়’, ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ এবং ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গান ৩টি ২০০৬ সালে বিবিসি বাংলার জরিপে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাংলা ২০ গানের মধ্যে স্থান করে নেয়।
বাংলা সংগীতে অসামান্য কৃতিত্বের জন্য আব্দুল জব্বার অনেক পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। এরমধ্যে রয়েছে একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার ও জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার।
আ.দৈ/এআর