রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪,
৩১ ভাদ্র ১৪৩১
ই-পেপার

রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
ইন্টারনেট বন্ধ করে বিটিআরসি-এনটিএমসি
Publish: Tuesday, 13 August, 2024, 5:00 PM

ডাটা সেন্টারে আগুন বা সাবমেরিন ক্যাবল নষ্ট হওয়া নয়, বরং ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান ঠেকাতে উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশেই রাজধানীসহ সারাদেশে বন্ধ করা হয়েছিলো ইন্টারনেট। সেই সময়কার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সরাসরি ফোন কল করে ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন। 

এছাড়া এই ডিজিটাল ক্র্যাকডাউনের মূলহোতা ছিলেন ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। যদিও সরকারি সংস্থাগুলো ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়টি স্বীকার করেনি। তবে ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়ে জুনাইদ আহমেদ পলক জানিয়ে ছিলেন, ইন্টারনেট অবকাঠামোয় অগ্নিসংযোগের কথা।

জানা গেছে, ১৫ জুলাই রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগ থেকে হোয়াটসঅ্যাপে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য এলাকায় মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। এর প্রায় আধা ঘণ্টার মধ্যে আরেক নির্দেশনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও ইন্টারনেট বন্ধের জন্য বলা হয়।

 পরদিন ১৬ জুলাই দুপুরের দিকে বিটিআরসির একই বিভাগ থেকে দেশের ৫৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ আসে। এ নির্দেশের ক্ষেত্রে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের কথা বলা হয়। বিটিআরসি এ মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সংস্থা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিটিআরসির একজন কমিশনার জানিয়েছেন, ইন্টারনেট বন্ধের সিদ্ধান্ত কমিশনারদের সঙ্গে আলোচনা করে নেয়া হতো না।

মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোশিয়নের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ এসব তথ্য জানিয়ে বলেছেন, যেদিন ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়, সেদিন এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে লাইন কেটে দেন সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। কোটা সংস্কার আন্দোলনের পথ ধরে সরকার পতনের এক দফা দাবির কর্মসূচি শুরু হবার পর দেশের ইন্টারনেট সেবা বন্ধে একের পর সিদ্ধান্ত আসতে শুরু করে।

 দুই সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দিত। তখনকার তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী পলকও সরাসরি ফোন করে ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই নিয়ে তার একের পর এক স্ববিরোধী বক্তব্য দিতে থাকেন তিনি।

তিনি সামনে এনেছিলেন ইন্টারনেট অবকাঠামোয় আগুন দেয়ার কথা। কিন্তু গেলো ১৭ জুলাই অনেকটা সাবেক প্রতিমন্ত্রী পলকের মুখ ফসকেই বেরিয়ে আসে সত্য।তিনি সেদিন বলেছিলেন,পরিস্থিতি বিবেচনায় ইন্টারনেট বন্ধ করতে হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টে যায় তার বক্তব্য। গণমাধ্যমগুলোকে আগের বক্তব্য পাল্টে ফেলতে বাধ্য করেন তিনি। নতুন করে বলেন,ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়নি।আপনা আপনি বন্ধ হয়ে গেছে। গত ২০ জুলাই তেজগাঁওয়ে পুড়ে যাওয়া মেইল প্রসেসিং সেন্টার দেখতে এসে বেরিয়ে যায় সত্য। 

এবার তিনি বলেন,গুজব ঠেকাতে বন্ধ করা হয়েছে ইন্টারনেট। এই বক্তব্য প্রচার হলে সেটিও বন্ধ করেন তিনি।আবারও জানান দুর্বৃত্তের আগুনে ডেটা সেন্টার পুড়ে যাওয়ায় ইন্টারনেট বন্ধ।
দেশের কোটি কোটি গ্রাহক যখন ইন্টারনেট বঞ্চিত।লাখো উদ্যোক্তা আর পেশাজীবীরা যখন ক্ষতিগ্রস্থ পলক তখনও সরব ছিলেন নিজের ফেসবুকে ইউটিউবে। সমালোচনার মুখে বলেন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে তার ইন্টারনেট সচল রেখেছেন। সমালোচনা যখন মাত্রা ছাড়িয়ে যায়,তখন জনসম্মুখে ক্ষমা চান পলক। কিন্তু পরদিন আবারও ইন্টারনেট শাটডাউন। 

দেশে ইন্টারনেট ঢোকে সাবমেরিন ক্যাবল অথবা আন্তর্জাতিক টেরিস্ট্রিয়াল ক্যাবল আইটিসি দিয়ে। সেই ইন্টারনেট প্রথমে যায় ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে বা আইআইজি প্রতিষ্ঠানের কাছে। আইআইজি থেকে ইন্টারনেট পোঁছায় সার্ভিস প্রোভাইডার বা আইএসপিদের কাছে। আইএসপি’র হাত ধরে বাসাবাড়িতে পৌছায় ইন্টারনেট।

আইএসপি প্রতিষ্ঠান বলছে ডিজিটাল ক্র্যাকডাউনের সময় আইআইজি থেকে তারা ইন্টারনেট পাননি। আবার আইআইজি জানায় সাবমেরিন কেবল থেকে তারা ইন্টারনেট পাননি। তারমানে দেশে ইন্টারনেট প্রবেশের মুখটাই বন্ধ করা হয়েছিল। তাহলে প্রশ্ন হলো ডেটা সেন্টার পুড়ে যাবার গল্পটা কতোটা যৌক্তিক? আইআইজিবি’র সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, এটি মোটেও যৌক্তিক নন,আমাদের পর্যবেক্ষণে পরিস্কার তৎকালীন সরকারের নির্দেশেই ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছিলো। ডেটা সেন্টার পুড়ে যাবার কারণে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট না হয় বন্ধ থাকল,তাহলে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট কেন বন্ধ হলো? খোদ মোবাইল অপারেটররাও বিস্মিত। বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, এই ঘটনায় আমরাও বিস্মিত হয়েছি।

 তিনি বলেন,ইন্টারনেট অর্থাৎ ফোর-জি সেবা বন্ধ করে দেয়ার জন্য মোবাইল অপারেটরদেরও বাধ্য করা হয়েছিল।তাহলে কার নির্দেশে এটি বন্ধ হলো। অভিযোগের আঙুল ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের দিকে। অ্যাসোসিয়েশনের দাবী এই মানুষটির পরামর্শেই ঘটে ডিজিটাল ক্র্যাকডাউন। মহিউদ্দিন বলেন,ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশের ক্ষেত্রে দ্বিমত করা হলে লাইসেন্স বাতিলসহ নানা ধরনের হুমকি দেয়া হতো। 

১৭ জুলাই থেকে ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশনাগুলো দিতে থাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা এনটিএমসি। সেদিন রাত প্রায় সাড়ে ১১টার দিকে এনটিএমসি থেকে মোবাইল অপারেটরদের বলা হয় তাদের আধেয় বা কনটেন্ট ‘বøকিং’ ও ‘ফিল্টারিং’ ডিভাইসের আওতার বাইরে থাকা ফেসবুক ও ইউটিউব দিবাগত রাত ১২টা থেকে বন্ধ করে দিতে হবে। এর দুই ঘণ্টার মাথায় এনটিএমসি সব মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দেয়। পরে এনটিএমসির নির্দেশনাতেই দেশে মোবাইল ইন্টারনেট সচল হয়।

এদিকে, ইন্টারনেট সেবা বন্ধে সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের আগের বক্তব্যগুলো খুঁজতে গিয়েও নতুন বিপত্তি। কারণ ৬ আগস্ট থেকে তার ফেসুবক ও ইউটিউব কোনোটাই আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন আইসিটি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। এরই মধ্যে ইন্টারনেট বন্ধে জড়িতদের নাম চেয়েছেন তিনি। সারাদেশে গেলো ১৭ জুলাই রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেট ও ১৮ জুলাই রাত ন’টার দিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যায়। টানা পাঁচ দিন সব ধরনের ইন্টারনেট বন্ধ ছিলো। আর মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ ছিলো ১০ দিন। সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক ও ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগ অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপের মতো সেবা বন্ধ ছিল ১৩ দিন।

সাবমেরিন কেবল কোম্পানি ও আইটিসি সূত্রে জানা যায়, ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় বিটিআরসি ব্যান্ডউইথ বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়া হয়। আইটিসি কোম্পানিগুলো লিখিত আদেশ চাইলে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হয়। রাত ৯টার মধ্যে পুরো দেশ ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন হওয়া পর্যন্ত বিটিআরসি নজরদারি করতে থাকে। সাবমেরিন কোম্পানিকে তখনকার প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ নিজে ফোন কল করে ইন্টারনেট বন্ধের জন্য বলেন। ৫ আগস্টেও সাবমেরিন কেবল কোম্পানি ও আইটিসি থেকে ব্যান্ডউইথ সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছিল।

বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস পিএলসির (বিএসসিপিএলসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা কামাল আহম্মদ বলেন, কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই তারা ব্যান্ডউইথ বন্ধ করেছিলেন। গত ১৭ জুলাই থেকে ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশনাগুলো দিতে থাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা এনটিএমসি।

সেদিন রাত প্রায় সাড়ে ১১টার দিকে এনটিএমসি থেকে মোবাইল অপারেটরদের বলা হয়, তাদের আধেয় বা কনটেন্ট ‘ব্লকিং’ ও ‘ফিল্টারিং’ ডিভাইসের আওতার বাইরে থাকা ফেসবুক ও ইউটিউব রাত ১২টা থেকে বন্ধ করে দিতে হবে। এর দুই ঘণ্টার মাথায় এনটিএমসি সব মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দেয়। এনটিএমসির মহাপরিচালক ছিলেন মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান। তাকে ৬ আগস্ট সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।


আ. দৈনিক / কাশেম/ ইকে টিপু

আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

অগ্রণী ব্যাংকে ডেভেলপমেন্ট অব লিডারশিপ কোয়ালিটি অব ব্রাঞ্চ ম্যানেজমেন্ট প্রশিক্ষণ
রূপালী ব্যাংকের ব্যবসায়িক পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত
এসডিজি ব্র্যান্ড চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড পেল বিকাশ
সোনালী ব্যাংকের সাথে ট্যুরিজম বোর্ডের চুক্তি
জনতা ব্যাংকে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

’ক্ষমতায় আসলে বিএনপি জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে ‘
বিএনপির কেন্দ্রীয় ত্রান তহবিলে সহায়তা দিলেন কামরুজ্জামান সোহাগ
আমিনবাজার ল্যান্ডফিলসহ চলমান উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন করলেন প্রশাসকের নেতৃত্বে ডিএনসিসির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা
বাউফলে সভাপতির বিরুদ্ধে সম্পাদকের সংবাদ সম্মেলন
সোনাইমুড়িতে বন্যাদুর্গত ৪০০ পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী দিয়েছে বাকোডিসি
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি- এর আরো খবর
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মাসুদ আলম
নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ তৌহিদুর রহমান

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : [email protected]
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝