Publish: Thursday, 7 March, 2024, 9:41 AM
পবিত্র রমজান মাস পরকালীন সম্পদ উপার্জনের অফুরন্ত সুযোগ। রমজানকে বলা হয় সওয়াব অর্জনের বসন্তকাল। এ মাসে একটি নফল ইবাদতের সওয়াব ৭০টি নফলের সমতুল্য এবং একটি ফরজের সওয়াব ৭০টি ফরজের সমান। একজন ব্যবসায়ী যেমন ব্যবসার মৌসুম আসার আগেই প্রস্তুতি নেয়, তেমনি রমজানের আগেও মুসলিমদের সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা চাই। বিশেষ করে ইবাদতের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি থাকা চাই।
দুনিয়াবি সব ধরনের ঝামেলা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখব। রোজা রাখার পাশাপাশি তারাবি পড়া, তেলাওয়াত করা, জিকির করা ইত্যাদির জন্য যেন কোনো বাধা না থাকে। সব বাধা-বিপত্তি দূর করে নেওয়া। রমজানের আগে এ রকম প্রস্তুতি নেওয়ার দিকে ইঙ্গিত করে প্রিয়নবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা রমজানের মাস নির্ধারণের জন্য শাবানের চাঁদেরও হিসাব রাখো’ (তিরমিজি : ৬৮৭)। অর্থাৎ শাবানের কয়দিন যাচ্ছে আর কয়দিন রমজান আসতে বাকি আছে, ঠিকমতো খেয়াল রাখো এবং রমজান আসার আগেই তোমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করো।
কেউ যদি আগে থেকেই মনে মনে প্রস্তুতি গ্রহণ করে, তা হলে রোজার সময় আর কোনো সমস্যা থাকবে না। মনের সাহসই হচ্ছে আসল। কেউ যদি দৃঢ়সংকল্প করে আমি রোজা রাখবই, তা হলে সামান্য গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা, স্বাস্থ্যের দুর্বলতা, এসব ছুতানাতা-অজুহাত রোজা রাখার জন্য কোনো প্রতিবন্ধক হতে পারে না। এসব অহেতুক অজুহাত দিয়ে রমজানের রোজা ছাড়ার কোনো অবকাশ নেই। তাই অহেতুক অজুহাত বের করে রোজা ছাড়লে আল্লাহর কাছে ধরা খেতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো অজুহাত ছাড়া বা রোগ ছাড়া রমজান মাসের একটি রোজা ভেঙে ফেলে, তার পুরো জিন্দেগির রোজা দিয়েও এর ক্ষতিপূরণ হবে না। যদিও সে জীবনভর রোজা রাখে’ (তিরমিজি : ৭২৩)। এ হাদিসে অনেক কড়া কথা বলা হয়েছে-একটি রোজা কাজা করলে সারাজীবন রোজা রাখলেও সে ক্ষতিপূরণ হবে না। তাই রোজা রাখার হিম্মত করতে হবে। হিম্মত করলে রোজা রাখা সহজ।
অনেকে এ হিম্মতের অভাবে তারাবিও পড়তে পারে না। মনে করে বিশ রাকাত তারাবি এও কি সম্ভব? বিশ রাকাত তারাবি পড়তে আমাদের কষ্ট বোধ হয়! অথচ দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার কারণে নবীজির পা মোবারক ফুলে যেত। কষ্ট মনে করার কি আছে? শুধু আমরাই নই। আগের যুগের উম্মতরাও রোজা রেখেছেন, তা হলে আমরা কেন পারব না? পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমাদের ওপর রোজার বিধান দেওয়া হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য এ বিধান দেওয়া হয়েছিল।’ (সুরা বাকারা : ১৮৩)
যদি কেউ কোনো ভালো কাজ করতে চায়, তা সে করতে পারে, আল্লাহ তায়ালা সেটি করার তওফিক দান করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘অবশ্য যে নিজেকে গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে চায়, আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে রাখেন; আর যে ব্যক্তি ধৈর্য ধরে তিনি তাকে ধৈর্যশীলই রাখেন। আর যে অভাবমুক্ত থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন। ধৈর্যের চেয়ে অধিক প্রশস্ত ও কল্যাণকর কিছু কখনো তোমাদের দান করা হবে না’ (বুখারি : ৬৪৭০)। রমজান মাস হলো মানুষের জীবন গঠন করার মাস। এ মাসে বেশি বেশি নেকি অর্জন করে জীবনের গতিকে পরিবর্তন করতে হবে। আর এখন থেকেই নিতে হবে প্রস্তুতি।