সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ত্বাধীন ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর হিসেবে চিহ্নিত ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) দুর্নীতিবাজ সাবেক মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলামকে রাতের আধারে নগর ভবনে অসৎ উদ্দেশ্যে প্রবেশ করতে দিয়ে, বেশ কিছু অবৈধ বিল ভাউচারে স্বাক্ষরে সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূূলক শাস্তি নিশ্চিত কর তে প্রশাসনে কাছে দাবি জানানো হয়েছে।
সূত্র মতে, ডিএনসিসির প্রশাসকের দপ্তরে গত ২৯ সেপ্টেম্বর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের ডিএনসিসির সভাপতি মোঃ সিদ্দিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফরহাদ হোসেন বুলেটের স্বাক্ষরে ১৭ দফা দাবি সম্বলিত আবেদন উক্ত দাবি জানানো হয়েছে।
১৭ দফা দাবির নিম্নে তুলে ধরা হলো:
১) দৈনিক মজুরীভিত্তিক (কাজ করলে বেতন না করলে নাই) কর্মচারীদের মজুরী বৃদ্ধি করা।
২) দৈনিক মজুরী ভিত্তিক (কাজ করলে বেতন না করলে নাই) কর্মচারীদের ১০বছর এর অধিক সময় কর্মরত আছেন তাদের স্কেলভুক্ত করা।
৩) স্কেলভুক্ত মাষ্টাররোল কর্মচারীদের স্থায়ী করা।
৪) ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন উদ্বৃত ও সমস্কেলে আত্মীয়করণকৃত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্রুততম সময়ে পদায়ন এবং পদোন্নতির ব্যবস্থা করা।
৫) ফ্যাসাবাদী সরকারের দোসর দুর্নীতিবাজ মেয়র এর সময়ে পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মচারী পদোন্নতির ব্যবস্থা করা।
৬) ৩য় শ্রেণির কর্মচারির শূন্য পদে ২৫% চতুর্থ শ্রেণিতে কর্মরত কর্মচারিদের মধ্য হতে পদোন্নতি প্রদান করার বিধান থাকলেও অদ্যাবধি কেউ পদোন্নতি পায় নাই, তাই জরুরী ভিত্তিতে পদোন্নতির ব্যবস্থা করা।
৭) মাষ্টাররোল কর্মচারিদের চাকুরির বয়স ৫৯ বছর থেকে ৬২ বছরে উন্নীতকরণ।
৮) যে সকল কর্মচারী (যেমন স্প্রেম্যান, বিদ্যুৎ শ্রমিক, সড়ক শ্রমিক, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ইত্যাদি) তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এবং আউটডোর কাজ করেন তাদের সরকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের আউটডোর ভাতা এবং ঝুঁকি ভাতা প্রদান করার জন্য অনুরোধ করছি। এছাড়াও তাদের সেফটি ইকুইপ্টমেন্ট প্রদানের অনুরোধ করছি।
৯) ফ্যাসীবাদ মেয়রের দূর্নীতির কারণে দীঘদিন বন্ধ থাকা সকল প্রকার নিয়মিত চতুর্থ শ্রেণী, দৈনিক মজুরী ভিত্তিক ও স্কেলভুক্ত কর্মচারীদের শীত ও গ্রীষ্মকালীন পোষাক, জুতা ও ছাতা প্রদান করা।
১০) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে বয়সসীমা ৪০ (চল্লিশ) বৎসর পর্যন্ত শিথিলযোগ্য রাখার অনুরোধ করছি।
১১) ৩য় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের শতভাগ সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল প্রদান করার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করছি।
১২) ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনী সকল কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণের কাজদ্রুত শুরু করার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করছি।
১৩) ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কর্মরত ফ্যাসীবাদী সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের নীল নকশাকারী ও দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
১৪) ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য কল্যাণ ট্রাষ্ট গঠন করার জন্য অনুরোধ করছি এবং কর্মরত অবস্থায় কোন কর্মকর্তা/কর্মচারী মৃত্যুবরণ করলে তাকে কল্যাণ ট্রাষ্ট হইতে চিকিৎসার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে আর্থিক অনুদান প্রদান করার জন্য অনুরোধ করছি।
১৫) ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য স্কুল কলেজ, বিশ^বিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ স্থাপন।
১৬) ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর দূর্নীতিবাজ মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম কে রাতের আধারে অসৎ উদ্দেশ্যে প্রবেশ ও অবৈধ বিল ভাউচার এর স্বাক্ষর করার ক্ষেত্রে সহায়তাকারীদের তদন্ত করে চিহ্নিতকরণ পূর্বক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
১৭) কর্মচারীদের মটর সাইকেল প্রদানের ক্ষেত্রে হায়ার পারচেস প্রথা বাতিল করতে হবে।
এছাড়া ডিএনসিসির প্রশাসকের দপ্তরে শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরে দাখিল করা আবেদনে ডিএনসিসির কয়েকজন কর্তকর্তার বিরুদ্ধে কিছু দুর্নীতিম ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অনিয়মের অভিযোগের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ২৬/০৯/২০২৪ ইং ডিএনসিসির সহকারী সচিব মোঃ জাহিদ হাসান গং কর্তৃক শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগকে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলেছেন শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ। একই সঙ্গে তাদের সম্পর্কে আনিত অভিযোগকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পাল্টা বেশ কিছু অনিয়ম, দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ সুষ্ঠু তদন্ত করে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।
এদিকে কর্মকর্তাদের পক্ষ গত ২৫/০৯/২০২৪ ইং বিকেল সাড়ে ৩ টায় সহকারী সচিব মোঃ জাহিদ হাসানকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা ও ঔদ্ধত্বপূর্ণ আচরণ করার অভিযোগ আনা হয়। এই অভিযোগে পক্ষে ৪৩ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী স্বাক্ষর করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষর কাছে দাখিল করা হয়েছে।
তবে এই অভিযোগ পসঙ্গে শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ লিখিত আবেদনে উল্লখ করেছেন ৪৩ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর স্বাক্ষরে দাখিল করা অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত। প্রকৃতপক্ষে গত ২৫ সেপ্টেম্বর ফ্যাসীবাদ সরকারের অংগ সংগঠন শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি ও কর্পোরেশনের অর্থ আত্নসাতের অপরাধে সাময়িক বরখাস্তকৃত আবদুর রশিদকে চাকুরীতে পুনর্বহালের লক্ষ্যে নথি উপস্থাপন করা হয়।
এর প্রতিবাদ স্বরুপ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সহ কয়েকজন কর্মচারী ওইদিন সহকারী সচিব জাহিদ হাসানের কক্ষে যান। তারা অনুমতি ছাড়া জাহিদ হাসানের কক্ষে প্রবেশ এবং তাকে স্যার সম্বোধন না করায় তিনি শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেনের সাথে উচ্চবাচ্য ও খারাপ ব্যবহার করেন। দুর্নীতিবাজ রশিদকে চাকুরীতে পূনর্বহালের বিষয়ে তথ্য জানতে চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে সহকারী সচিব ওই সময় কর্মচারী প্রতিনিধিদের সাথে ঔদ্ধত্বপূর্ণ আচরণ করেন।
এখানে উল্লেখ্য যে, মোঃ জাহিদ হাসান ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা হিসাবে ফ্যাসিবাদী সরকারের মনোনীত মেয়র কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত হন। বৈষ্যমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফসল বর্তমান সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার লক্ষ্যেই ফ্যাসিবাদ সরকারের দোসর ডিএনসিসির সাবেক মেয়র মোঃ আতিলকুল ইসলাসের এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কিছু কর্মকর্তা গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে।
কর্মচারী প্রতিনিধিদের অভিযোগে আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এরমধ্যে অঞ্চল-৯ কর কর্মকর্তা মোঃ শাহেদ জোহার এবং অঞ্চল-৪ এর উপ কর কর্মকর্তা মোঃ মাইদুল ইসলাম। তারা দুইজনই সাবেক মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলামের খুবই আস্থাভাজন ব্যক্তি ছিলেন। সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামের সাথে মোঃ শাহেদ জোহার আমেরিকা ভ্রমনে সফর সঙগী হয়েছেন।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, মোঃ শাহেদ জোহার অঞ্চল-৩ এর উপ কর কর্মকর্তা হিসাবে কর্মরত থাকাকালে সংশ্লিষ্ট কর কর্মকর্তার যোগসাজগে আপিল বোর্ডের অনেক নথি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান কর্তৃক আবেদন খারিজের নথি ঘষামাঝা করেছেন। বার্ষিক মূল্যায়ন থেকে ১৫% সুবিধা দিয়ে কামিয়ে দিয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন (যাহা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে)।
সাবেক মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলামের সময়ে পেয়েছেন পদোন্নতি এবং লাভজনক পদায়ন পেয়েছেন অঞ্চল-৩, গুলশানের মত ভিআইপি অঞ্চলে।তিনি অনেক সম্পদের পাহাড় গড়েছেন, মালিক হয়েছেন গাড়ি, বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ একাধিক ফ্ল্যাটের।
শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষ থেকে আরো অভিযোগ আনা হয়েছে, সাবেক প্রধান শেখ হাসিনাকে গালি দেয়ার অপবাদ দিয়ে অঞ্চল-২ এর প্রকৌশল বিভাগের অফিস সহায়ক নূর মোহাম্মদের (নুরু) বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসাবে মোঃ শাহেদ জোহার উক্ত কর্মচারীকে চাকুরীচ্যুত করেন। পরে উক্ত কর্মচারী নুর মোহাম্মদ চাকরিচ্যুত হয়ে মানষিক ভাবে বিকারগ্রস্ত হয় এবং পরবর্তীতে ষ্ট্রোক করে মারা যান।
আ. দৈনিক / কাশেম