শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
Ajker Dainik

লক্ষ্মীপুরে ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলের ইজারা সিন্ডিকেট, শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

আজকের দৈনিক | জিহাদ হোসেন রাহাত ,লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি,

প্রকাশিত: জুন ১১, ২০২৪, ০৮:০৪ পিএম

লক্ষ্মীপুরে ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলের ইজারা সিন্ডিকেট, শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
নিজস্ব ছবি

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে অস্থায়ী পশুর হাটের ইজারা না পেয়ে স্কুল পড়ুয়া কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দিয়ে মানববন্ধন করানোর অভিযোগ উঠেছে উপজেলার বামনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাফাজ্জল হোসেনের ছেলে মিরণ হোসেনের (৩০) বিরুদ্ধে। কাজীর দিঘীরপাড় সরকারী প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠটি অস্থায়ী পশুর হাট হিসেবে ইজারা পেতে চেয়ারম্যানের ছেলে মিরণ গড়ে তোলে একটি সিন্ডিকেট। তার সাথে যুক্ত হয় একই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক ও স্কুল কমিটির এক সদস্য।

 ইজারা পাওয়া নুর নবীকে পরাস্ত করতে মিরণের সাথে অংশ নেয় মোরশেদ আলম চৌধুরী ও মোঃ মনিরুজ্জামান। এতে মোরশেদ ডাক তোলেন ২০ হাজার ২শ টাকা এবং মোঃ মনিরুজ্জামান তোলেন ২২ হাজার ৫শ টাকা। একই ডাকে মিরণ তোলেন ৪৭ হাজার টাকার ডাক। পরে নুর নবী চৌধুরী ৪৮ হাজার তুললে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ১০ শতাংশ আয়করসহ সর্বমোট ৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন তিনি। পশুর হাটটির সরকারি মূল্য ১৮ হাজার টাকা। 

জানা যায়, ইজারা নিতে তিনজনের সিন্ডিকেট গড়া মিরণের বাবা চেয়ারম্যান তাফাজ্জল হোসেন মানববন্ধনে অংশ নেয়া বিদ্যালয়টির বিদ্যুৎসাহী সদস্য। সে সুবাদে চেয়ারম্যান তাফাজ্জল হোসেন প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় ও সহযোগিতায় বিদ্যালয় মাঠে পশুর হাট বন্ধের দাবিতে মঙ্গলবার (১১ জুন) দুপুরে মানবন্ধন করে রায়পুর উপজেলার কাজীর দিঘীরপাড় সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিজাম উদ্দিনের নেতৃত্বে মানববন্ধনে বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এসময় শিক্ষার্থীরা স্কুল মাঠে গরু ছাগলের হাট বন্ধের দাবিতে দেয় নানান ধরনের স্লোগান। 

এ বিষয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, আমরা কোনো কিছু জানতাম না। ক্লাস থেকে ডেকে নিয়ে একজন আমাদের হাতে ব্যনার ধরিয়ে দেয়। তারপর ছবি তুলে চলে যায় তারা।অস্থায়ী পশুর হাটের ইজারা পাওয়া নুর নবী চৌধুরী (১৯) অভিযোগ করে বলেন, চেয়ারম্যান তাফাজ্জল হোসেনের ছেলে মিরণ হোসেন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দিয়ে মানববন্ধন করিয়েছে। তারা প্রভাব খাটিয়েছে। কারণ চেয়ারম্যান তাফাজ্জল হোসেন স্কুলের বিদ্যৎসাহী সদস্য। 

প্রধান শিক্ষক নিজাম উদ্দিনসহ শিক্ষক ও শিক্ষার্থিদের দাবী, প্রতি মঙ্গলবার হাটের কারণে স্কুল বন্ধ থাকে। এছাড়া ঈদের সময় বুধবার ও বৃহস্পতিবার দুইদিন হাট চলে। এতে করে শিক্ষার্থীদের লেখা পড়া বিঘ্নিত হয়। পাশপাশি গরু ছাগলের হাটের কারণে বিদ্যালয়ের গোটা মাঠ অধিকাংশ সময় কর্দমাক্ত থাকে। চলাচল নানাভাবে ব্যাঘাত ঘটে। এসব কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ভালো শিক্ষার্থীরা এখানে ভর্তি হতে চায় না। এছাড়াও শিক্ষার নতুন কাইটেরিয়া স্কুল মাঠে ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন ক্লাস করাতে হয়। তাই এ মাঠে হাট বসালে বিদ্যালয়ে ক্লাস পরিচালনার পরিবেশ নষ্ট হয়। 

অভিযোগের বিষয়ে সিন্ডিকেটের মুল হোতা মিরণ হোসেন বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ কেন মানববন্ধন করেছে সেটি তাদের ব্যাপার। আমি কিছু জানি না। আমার বাবা বিদ্যালয়টির বিদ্যুৎসাহী সদস্য। আমাদের দায় নেই। ইজারার দিন আমার বাবা উপস্থিত ছিলেন। ইজারা নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই। আমার থেকে বয়সে ছোটো নুর নবী হাটটি ইজারা নেয়ায় আমার ইগোতে লেগেছে। 

বিষয়টি নিয়ে জানতে চেয়ারম্যান তাফাজ্জল হোসেনকে বেশ কয়েকবার মোবাইল কল করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইমরান খান বলেন, অস্থায়ী পশুর হাট দিতে সেখানে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তাই আমরা দিয়েছি। স্থানীয় চেয়ারম্যান তাফাজ্জল হোসেন মুন্সি ইজারার দিন উপস্থিত ছিলেন। তিনি ক্ষতির বিষয়ে কিছু উল্লেখ করেন নি। কোনো বাধা না থাকায় উন্মুক্ত ডাকের মাধ্যমে ভ্যাট ও আয়করসহ হাটটি ৬০ হাজার টাকায় ইজারা দেয়া হয়েছে।

আ. দৈনিক / একে/ জিহাদ

Link copied!